বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: গত আট বছরে দেশে যেসব ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে, তার তদন্ত এবং ফোনে আড়িপাতা রোধে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে দাখিল করা রিট আবেদনের ওপর আদেশের জন্য দিন পিছিয়ে আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল বেঞ্চ আজ রবিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) এ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন এবং বিটিআরসির পক্ষে আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই-রাকিব।
এর আগে গত ১৩ সেপ্টম্বর ওই রিটের ওপর শুনানি শেষে আদেশের জন্য ১৯ সেপ্টেম্বর দিন ঠিক করা হয়েছিল।
গত ১০ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির রিট আবেদনটি দাখিল করেন।
ওই রিট আবেদনের সঙ্গে ফোনে আড়িপাতা নিয়ে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ার আইন এবং ওইসব দেশের আদালতের বিভিন্ন রায়ের সিদ্ধান্ত ও পর্যবেক্ষণ নজির হিসেবে তুলে ধরা হবে। এসব নজির ও আইন নিয়ে ১৭১৭ পৃষ্ঠার নথি প্রস্তুত করা হয়েছে। নিয়ম অনুসারে এর অনুলিপি অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় ও বিটিআরসি-কে সরবরাহ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ফোনালাপ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ফোনালাপ, প্রয়াত ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও রাজশাহী মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার নাজমুল হাসানের ফোনালাপ, ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরীসহ ২০১৩ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সংঘটিত ২০টি আড়িপাতার ঘটনা উল্লেখ করে দাখিল করা হয় রিট আবেদনটি।
আড়িপাতা রোধে এবং ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনা তদন্তে পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) গত ২২ জুন আইনি নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশের জবাব না পেয়ে রিট আবেদন দাখিল করা হয়। এতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিবিষয়ক সচিব, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়।
রিট আবেদনকারী আইনজীবীরা হলেন অ্যাডভোকেট রেজওয়ানা ফেরদৌস, উত্তম কুমার বনিক, শাহ নাবিলা কাশফী, ফরহাদ আহমেদ সিদ্দীকী, মোহাম্মদ নওয়াব আলী, মোহাম্মদ ইবরাহিম খলিল, মুস্তাফিজুর রহমান, জি এম মুজাহিদুর রহমান (মুন্না), ইমরুল কায়েস ও একরামুল কবির।
আবেদনে বলা হয়, সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী চিঠিপত্র ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের গোপনীয়তা সংরক্ষণ নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। এ ছাড়া ২০১১ সালের ১৬ এপ্রিল বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি অ্যাক্ট-২০০১-এর ৩০(চ) ধারা অনুযায়ী টেলিযোগাযোগের একান্ততা রক্ষা নিশ্চিত করা এই কমিশনের দায়িত্ব। কিন্তু ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনা অহরহ ঘটছে। অথচ সংবিধান ও আইন অনুযায়ী কমিশনের দায়িত্ব ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সংরক্ষণ নিশ্চিত করা। যেসব ফোনালাম ফাঁস হয়েছে তা উল্লেখ করে আবেদনে বলা হয়, এসব আড়িপাতার ঘটনা বাংলাদেশের গণমাধ্যমে বহুল প্রচারিত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল হয়েছে, যা আইনসম্মত হয়নি।
রিট আবেদনে এ বিষয়ে ২০১৯ সালের ২৮ আগস্ট বিচারপতি মো. শওকত হোসাইন, বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মবিনের গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চের দেওয়া একটি রায় তুলে ধরা হয়।
ওই রায়ে বলা হয়, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন ও টেলিফোন সেবা প্রদানকারী কম্পানিগুলোর দায়িত্ব সর্বাধিক। সংবিধান ও আইন অনুযায়ী ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সংরক্ষণ তাদের দায়িত্ব। তারা আইনের বিধান ব্যতিরেকে গ্রাহকদের ব্যক্তিগত যোগাযোগের তথ্য প্রদান করতে পারে না।
ইউকে/এএস