পটুয়াখালী সংবাদদাতা: পটুয়াখালীর এক স্কুলছাত্রের চিঠির জবাবে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছে সেতু বিভাগ। জমি অধিগ্রহণ, পরামর্শক ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিয়োগ শেষ পর্যায়ে। এতে আনন্দিত স্কুলছাত্র শীর্ষেন্দু বিশ্বাস ও পরিবার এবং স্থানীয়রা।
২০১৬ সালে পটুয়াখালী সরকারি জুবিলি উচ্চ বিদ্যালয়ের সেই সময়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শীর্ষেন্দু বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি দিয়ে মির্জাগঞ্জ থেকে পটুয়াখালী যাওয়ার জন্য পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের অনুরোধ জানায়। শীর্ষেন্দু বিশ্বাসের চিঠির জবাবে প্রধানমন্ত্রী মির্জাগঞ্জে পায়রা নদীতে একটি সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তাকে আশ্বস্ত করেন। প্রস্তাবিত এ সেতুটি নির্মাণে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চিঠি দিয়ে সেতু বিভাগকে অনুরোধ জানানো হয়।
বর্তমানে ডিপিপি অনুসারে ১০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রশাসনিক অনুমোদন শেষে অধিগ্রহণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অতিরিক্ত জমি ডিপিপি সংশোধনপূর্বক অধিগ্রহণ করা হবে। গত ১২ আগস্ট ঠিকাদার নিয়োগের দরপত্র জমা নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দরপত্র মূল্যায়ন চলমান রয়েছে।
বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সেতু এলাকা পরিদর্শনে যান বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক ও সেতু বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক।
তিনি বলেন, এটি প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব উপহার। একজন স্কুলছাত্রের চিঠিতে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী আমাদের সে মোতাবেক নির্দেশনা দিয়েছেন। তখনই আমরা কাজ শুরু করেছি। জমি অধিগ্রহণ শেষে মূল কনস্ট্রাকশনের কাজ শুরু হবে।
এসময় জেলা জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, সেতু কর্তৃপক্ষ ও সেতু বিভাগের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। শীর্ষেন্দু বলে, আমার মত একজন ছোট মানুষকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রী রক্ষা করেছেন, এতে আমি, আমার পরিবার, সহপাঠী এবং এলাকাবাসী আনন্দিত। আমি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।
কচুয়া-বেতাগী-পটুয়াখালী-লোহালিয়া-কালাইয়া সড়কের ১৭ তম কিলোমিটারে (জেড ৮০৫২) পায়রা নদীর ওপর পায়রাকুঞ্জ নামক স্থানে ১৬৯০.০০ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণের মাধ্যমে মির্জাগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে পটুয়াখালী সদর এবং ঢাকার সরাসরি ও নিরবচ্ছিন্ন এবং ব্যয় সাশ্রয়ী সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা হবে।
প্রস্তাবিত সেতুটি নির্মিত হলে মির্জাগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে পটুয়াখালী সদরের ভ্রমণ সময় প্রায় দেড় ঘণ্টা হ্রাস পাবে এবং লেবুখালী ও পদ্মা সেতুর মাধ্যমে মির্জাগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে ঢাকার সরাসরি ও নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে।
সেতুর প্রাথমিক ডিজাইন অনুযায়ী বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী এ রুটটি প্রথম শ্রেণির হওয়ায় নৌযান চলাচলের সুবিধার্থে সেতুর ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স (vertical clearance) ধরা হয়েছে ১৮.৩ মিটার। সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ১৬৯০ মিটার। এর মধ্যে থাকবে ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের নয়টি স্প্যান এবং উভয় প্রান্তে ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের দু’টি স্প্যান ও ৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের ২৩টি স্প্যান। সেতুটি নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৪২ কোটি টাকা।
প্রকল্প বাস্তবায়নকালে প্রকল্প এলাকার জনগণের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। তাছাড়া নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পরও সেতুর রক্ষণাবেক্ষণেও নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। উক্ত এলাকায় নতুন নতুন শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠিত হবে। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ ওই এলাকার জনগণের আয় বৃদ্ধি পাবে। যা জিডিপিতে অবদান রাখবে।
সেতু বিভাগের তথ্য মতে, পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ডিপিপি ২০২০ সালে মার্চে একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৪২ কোটি টাকা। ২০২৫ সালের মধ্যে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। শীর্ষেন্দু বর্তমানে সরকারি জুবিলি উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে নবম শ্রেণিতে অধ্যয়রত।
ইউকে/এএস