নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে এক মাসে মৃত্যু কমেছে অর্ধেকেরও বেশি। চলতি মাসে করোনা ভাইরাসজনিত কারণে মোট ১৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
হাসপাতালটিতে এর আগে আগস্টে ৩৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। অর্থাৎ হাসপাতালের দেওয়া মৃত্যুর এই পরিসংখ্যানই বলছে এক মাসের ব্যবধানে করোনাজনিত কারণে মৃত্যুর হার অর্ধেকেরও বেশি কমেছে।
অথচ করোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর থেকে সারা দেশের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে সব সময়ই আলোচিত ছিল রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। এর আগে গত ২৯ জুন সারা দেশের মধ্যে রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে সর্বোচ্চ ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল, যা ছিল একদিনে মৃত্যুর সর্বোচ্চ রেকর্ড। জুনে মারা যান ৪০৫ জন। এরপর গত ১ জুলাই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২২ জনের মৃত্যু হয়। মূলত এরপর থেকেই মৃত্যুর সংখ্যা কমতে শুরু করে। সর্বশেষ গত তিন মাসের মধ্যে জুলাইয়ে ৫৩১ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
গেল ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালের এই করোনা ইউনিটে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে রাজশাহী, নওগাঁ ও নাটোরের একজন করে রোগী মারা গেছেন। এদেরমধ্যে নওগাঁর রোগী করোনা পজিটিভ ছিলেন। অন্য দুজন করোনা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মৃত তিন জনের মধ্যে দুজন পুরুষ ও একজন নারী।
এদিকে, মৃত্যুর পাশাপাশি করোনা ভাইরাসে সংক্রমণের হারও ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে রাজশাহীতে। সর্বশেষ বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাজশাহী জেলার মোট ২৮১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে ২১ জনের দেহে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণের হার ৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। অথচ চলতি মাসের শুরুতেও রাজশাহীতে করোনা সংক্রমণের হার ১৭ থেকে ২২ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করছিল।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ কমছে। এটা অবশ্যই ভালো লক্ষণ। এ সময় সবাইকে আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। বাইরে বের হলেই মুখে মাস্ক পড়তে হবে। বয়স্কদের যত দ্রুত সম্ভব টিকা নিতে হবে। এছাড়া সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর সর্বোচ্চ মৃত্যু দেখেছে রাজশাহী। তাই এখন স্বাস্থ্যবিধি না মানলে তৃতীয় ঢেউয়েরও আশঙ্কা রয়েছে।
জানতে চাইলে হাসপাতাল পরিচালক বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল দেশের রোল মডেল হয়েছে। এর পেছনে এখানকার চিকিৎসক ও নার্সসহ হাসপাতালের প্রতিটি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর অবদান রয়েছে। তারা জীবন বাজি রেখে করোনা রোগীদের চিকিৎসা করেছেন। অনেকে ছুটি পর্যন্ত নেননি।
হাসপাতাল পরিচালক আরও জানান, বর্তমানে ভর্তি রোগীর সংখ্যাও কমে এসেছে। রোগীর চাপ থাকায় করোনা ইউনিটে শয্যাসংখ্যা ৫১৩ করা হয়েছিল। তবুও প্রতিদিন এর বেশি রোগী ভর্তি হতেন। কিন্তু রোগীর চাপ কমে আসায় হাসপাতালের করোনা ডেডিকেটেড শয্যা কমিয়ে ২৪০টি করা হয়েছে। যদিও বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা পর্যন্ত করোনা ইউনিটে ভর্তি ছিলেন ৯৩ জন। শয্যার বিপরীতে এই রোগীর সংখ্যা কম বলেও উল্লেখ করেন- হাসপাতাল পরিচালক।
ইউকে/এসই/এসএম